কোটা ব্যবস্থা ও স্বাধীনতার মৌল চেতনা


বাংলাদেশ’ একটি নাম যে নামের সাথে মিশে আছে এক

 সুদীর্ঘ সংগ্রামী পথচলার ইতিহাস। বাঙ্গালীর জীবনে সংগ্রামী ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৭৫৭ সালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পলাশী প্রান্তরে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খান, রায়বল্লভ, জগৎশেট এর মতো রাজকর্মচারীদের জন্য ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীপ্রান্তরে পরাজয়  ঘটে বাংলার  স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ- দৌলার। বাঙ্গালীর ভাগ্যাকাশে নেমে আসে পরাধীনতার অশনিসংকেত!

এরপর ২০০ বছর বেনিয়াদের শাসনের নামে শোষকণ চলে! তবু মৃত্যু ঘটে নি মুক্ত হবার প্রবল ইচ্ছার, থেমে থাকে নি মুক্তির সংগ্রাম!

যার ধারাবাহিতায় ঘটেছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সারা মহাদেশব্যাপী গড়ে উঠেছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন যার প্রথম সারির নেতাকর্মীরা ছিলেন মাষ্টারদা সূর্যসেন,প্রফুল্ল চাকী, ক্ষুদিরাম বসু এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম বিপ্লবী ও প্রথম নারী শহীদ প্রতিলতা ওয়াদেদার। তাদের প্রতিরোধের মুখে ব্রিটিশ শাসকের ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে প্রণীত' ভারত স্বাধীনতা আইন' এর কারনে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের, যার মুল ভিত্তি ছিল ধর্ম।

এ দুটি রাষ্ট্রের মুলত নাম  ছিল হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্বের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো, মুসলমানদের জন্য পৃথক বাসভুমি হলো পাকিস্থান। পাকিস্তান দুইটি অংশে বিভক্ত ছিল। যা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল। মুসলিমদের জন্য আলাদা বাসভুমি হলো কিন্তু শান্তি এসেছিল কি? নাকি শুধুই ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তার হয়েছিল? পূর্বপাকিস্তানের ৫৬% মানুষ বাঙ্গালী হওয়া স্বত্তেও স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়নি বাঙ্গালীদের। শোষণ করেছে ১২০০ মাইল দুরের পশ্চিম পাকিস্তানীরা। বাঙালীদের সাথে প্রথম দানা বাঁধে ভাষার প্রশ্নে।

১৯৪৮ সালে প্রথমবার পশ্চিম পাকিস্তানে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা দেন :'Urdu and Urdu shall be the only state language of Pakistan’ তখন উপস্থিত ছাত্রজনতা বলল "No No Bangla shall be the state language’। এই বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা গড়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম  আন্দোলন সংগ্রামের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম "সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" যার পরিবর্তিত রুপ হলো ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি যার জন্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আম বাগানে। যার মুল উদ্দেশ্য ছিল সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এক শোষণ মুক্তি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলা।

স্বাধীনতাপূর্ব সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী এই সংগঠন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এবার প্রশ্ন হলো স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী ছাত্রলীগ তার আদর্শ এখনো ধারণ করে কি?

এবার আশা যাক স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ সম্পর্কে!


১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে মাত্র ১১ মাসে প্রণয়ন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান। যার মুলনীতি হলো গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ যদিও বলে যে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় চলছে আদৌ কি তাই?  নাকি গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে দেশ চালাচ্ছে কোনো স্বৈরশাসক?

স্বাধীনতার স্বপক্ষের লেবাস পড়া আওয়ামীলীগ যে এখন হিটলারের নৈশিবাহিনীকে হার মানিয়েছে  তা সহজেই বোধগম্য হয় বিবিসি প্রকাশিত এক রিপোর্টে। এ রিপোর্টে বলা যে বাংলাদেশ পাঁচটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের মধ্যে একটি!


এ বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় সাম্প্রতিক সময়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে দেয়ার বিষয় থেকে!

এবার আসা যাক কৌটা বলতে আমরা কি বুঝি?

কৌটা বলতে সাধারণত এমন একটি বিশেষ ব্যবস্থাকে বোঝায় যার মধ্যে দিয়ে ঐ সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী সমাজের মুলস্রোত ধারায় একীভূত হতে পারে। বিশ্বের সব দেশেই কৌটা ব্যবস্থা আছে তবে তা নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য যেমন ২০ বা ৩০ বছর। এই নির্দিষ্ট সময়ের পর অন্য কোনো জনগোষ্ঠী কৌটা সুবিধা ভোগ করে। এটা উল্লেখ্য যে, উক্ত দেশসমূহে যেকোনো একটি ক্ষেত্রে একবার সুবিধা ভোগ করবে বারবার কৌটা দিয়ে বিশেষ সুযোগ নেয়া যায়না। এ

কিন্তু আমাদের দেশে এক কৌটার যথেচ্ছা ব্যবহার করে এক ব্যক্তি একাধিক সুবিধা লুফে নিচ্ছে। কিন্তু কৌটায় নিয়োগ বা অন্যান সুযোগ ১ প্রদানের ক্ষেত্রে নেই কোনো পর্যালোচনা। মেরুদণ্ডহীন কতৃপক্ষের স্পিডমানির আপোষগামিতা করেছে কৌটা ব্যবস্থাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ!

এবার আসা যাক মুক্তিযোদ্ধা কৌটা নিয়ে সাধারণ মানুষ ও সরকারের ভাবনা প্রসঙ্গে..


সরকার ও কিছু সাধারণ জনগণ মনে করেন যে মুক্তিযোদ্ধা কৌটা সংস্কার করলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হবে তাদের কাছে  কিছু প্রশ্ন-


১.বাংলাদেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা কত?

২. মুক্তিযোদ্ধা উত্তরাধীকারসুত্র এতো প্রশস্ত কেন যে নাতী নাতনীরা সুযোগ পাচ্ছে? নাতি নাতনীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান কী?

৩.নীলফামারী শহরে যখন বীরশ্রেষ্ঠ সন্তান ভিক্ষা করে তখন কি মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা হয়না?

৪.যখন একটি রাস্তায় পথশিশু হয়ে বড় তখন কি স্বাধীতার স্বাদ পায় তারা?


আরারো ফিরে আসি কৌটা সংস্কার আন্দোলন  প্রসঙ্গে:

আমরা পৃথিবীর ইতিহাস থেকে শিক্ষা পাই যে  যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে তরুণরাই সবচেয়ে উদ্যোমী ভুমিকা পালন করে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার ব্যতিক্রম নয়।

আন্দোলনকারীদের প্রথম ও প্রধান কথা হচ্ছে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধা কোটার দৌরাত্ম্য হ্রাস। কৌটায় নয়, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজে নিয়োগ করা।


বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ৮২ লক্ষ শিক্ষিত বেকার আছে যাদের কোনো কৌটা নাই। তারা কি চাকুরী করবেনা?

আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকার প্রধান অভিমানের সুরে মেনে নিলেন বললেন আর কোন কৌটা থাকবেনা। এরপর শুরু হলো এক একটি নাটক কেউ বলল রাজাকারের বাচ্চা, কেউ বলল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, নেতাকর্মীদের আটক করা হলো। গত দুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হাড় ভেঙ্গে দেয় তখন তাকে রামেকে রাখে নি। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয় তখন প্রোক্টর নির্লজ্জের মতো বলে তিনি কিছুই জানেন না!

এটা কি শুধুই মেরুদণ্ডহীনতা না কি পরোক্ষ পক্ষপাত ফ্যাসিবাদী সসমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য?

এখন সিধান্ত নেয়ার সময় আমরা কি করব হাত গুটিয়ে নাকি প্রতিবাদে মিছিলে বজ্রমুষ্টিতে উঁচিয়ে বাচঁব?

No comments

আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ

Powered by Blogger.